সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

অনুবাদ

আমাকে এভাবে অনুবাদ করো না
জ্যেতির্ময় মুখার্জি 

জলের ভঙ্গিটাই  এমন
যেভাবে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ঝুঁকেছে বিকেল

স্মাইল প্লিজ
              আর আমাকে
              ফুরিয়ে যাচ্ছো ঘর

  যাওয়ার কি কোনো কথা ছিল?

কি নিষ্ঠুর তুমি শীত
           ছায়া থেকে নেমে

চমৎকার
আমাকে এভাবে অনুবাদ করো না 

রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

রূপকথা

রূপকথা
শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায় 

আমি চাই তাই পাহাড় সেজেছে
আজকে নীল...
আমার জন্য গাছেদের আজ
সবুজ সাজে, লেগেছে ধুম....

আমি দেখি তাই সূর্যটা রোজ
নিজেকে সাজায় আহ্লাদে...
আমি না দেখলে চাঁদটা কিন্তু
সাজতো না ঐ জোৎস্নাতে....

আমার জন্য ফুলেদের ফোটা
আমারি জন্য ঝরে পড়া ...
আমার জন্য কথা রাখে নদী
সাগরের দিকে পথচলা....

আমার জন্য এত আয়োজন
এত খুশিমাখা দিনগুলি...
তবে কেন বলো,ঝরাবো অশ্রু রাখব নিজেকে,  নির্জনে....

তারচেয়ে ভালো, দুঃখ-ব্যথারা
আমাকেই  ছাড়, যাও দূরে ।।


পূর্ণ

পূর্ণ হয়েছে পাত্র
অমৃত বা বিষে
খবরে কাজকি আর?
জানা গেলে কার লাভ
কার ক্ষতে কতটা
প্রলেপ তুমি দেবে

শেষের সে দিনক্ষণ
জানা হয়ে গেলে
কে আর জমিয়ে রাখে
অভিমান বলো?

সাঁতার

সাঁতার
সম্রাট পাল
সাঁতারের কৌশল শিখিয়ে বাবা যখন মাঝ পুকুরে ছেড়ে দিতেন, নাক মুখ হয়ে কিছু জল গলার নীচে নেমে যেত
বাবা দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকতেন, ধরতেন না

অফিসের পথে রওনা হবার সময় বাবা এখন চেয়ে থাকেন বারান্দায় বসে।

মায়া

মায়া
সুব্রত ঘোষ



বসে আছি সারাদিন
সারারাত....

যুগের পর যুগ
এভাবেই পেরিয়ে এসেছি মিলনস্থল জন্মভুমি

তবু কেউ ভালোবেসে বিশেষ চুমু দিয়ে গেলো'না আজও 


মাঝে মাঝে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে হয়
তপ্ত রোদের মতো প্রখর হতে হতে
যদি ফিরে আসে সক্ষমতা

তবে তো আমরাই পৃথিবী'র শ্রেষ্ঠ জনসম্পদ


দাঁড়িয়ে আছি
এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো সহস্র বছর

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পাথর - মমি
তবুও যদি কাছে না আসো
তাহলে নিশ্চিত উড়ে যাবো পাখিদের মতো 

হাজার কাঁদলেও ফিরে আসবো'না ' মায়া '

সুরভে সৌরভে

সুরভে সৌরভে
অতনু ভুইঁয়া 

চির হরিতে বৃক্ষ তাতে কিছু মিথ্যা কিছু সত্য ফুটেছে।
কেউ বলছে, কেউ শুনছে, চির হরিত বৃক্ষ অবাক চোখে দেখছে।
কারো কারো অনেক তাড়া, এদিক থেকে ওদিক থেকে ফুল কুড়োচ্ছে
অভিশপ্ত এক ফুল অপেক্ষা করে ঝড়ে পড়বে একসাথে।

আকাশ পানে আকাশ খোজে কি হবে
দিনভরা রাত সামনে আসে। 
রাতভরা দিন গতি হারিয়েছে, তারাদের অন্যায় কি খোঁজে বেড়া!   
মিথ্যা সত্য ফুল ঝড়ে পাড়ার উপক্রমে 
চির হরিত বৃক্ষ বারন করল 
বাঁচিয়ে রাখো ফুল, হারিয়ে ফেলো সর্বনা। 

 হুঁশ ভুলে গেছে - পাপ তাড়া করে
ঘেমে শরীর শীতল। 
ফুলের বৃত্ত, ফুল ঝড়ছে 
ছুটে চলি গন্ধে,  'সুরভে সৌরভে' ।  

জীবিতরা

জীবিতরা
অভিজিৎ দাস  

রাতের পাখিরা দম বন্ধ করা তারাদের নেভা-জ্বলা দেখে
রাতের মানুষরা চাঁদ দেখেনা, চাদেও যৌনাঙ্গ দেখে ।

রেল লাইনের ধার ঘেঁষে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে
হাঁটতে হাঁটতে আড়াল এসে ধরা দেয় প্রেমে, তুমি হাত ধরো সজরে চেপে
চুমু খেতে খাও একটা, বলি, দাঁত ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে এসো
এখানে কলগেট নেই, ব্রাশ নেই
বহুকাল খোঁজে পাইনি, চুমুও খাওয়া হয়নি আর

দাঁত ব্রাশ না করেই আমরা একদিন –
সহস্র চুমু খাব ।

তোকে আমি যখন দেখি




তোকে আমি যখন দেখি
ইতিকা বিশ্বাস


তোকে আমি যখন দেখি কি যেন তুই ভাবিস
বলতে পারিস একটু খুলে না হয় আমাকে
নিস্তব্ধ নিঃশ্চুপ কেন হয়ে গেলি
খুব বাড়াবাড়ি করেছি কি আমি তুই বলতিস।

খামখেয়ালি ইচ্ছে মতো কেন তোর পাগলামি
লাজুক চোখে ইশারাতে কেন ডাকিস
ভয় কি পাস আমাকে তুই একটু দেনা বলে
তোর মতো হয়ে বলবো কথা দেখবি আমি।

কেনরে তুই এমন হলি আমার মনের মতো
সারাদিন তাই তোকেই খুঁজি শত কাজের ফাঁকে
হাসাতে তুই যেমন পারিস হাসতে আমি পাড়ি
তাই ঘুমের ঘোরে হেসে ফেলি আমি আমার মতো।

হচ্ছেটা কি নেইকো সাড়া দিচ্ছি তোর পাহারা
বদলে গেছিস এমন করে যায়নারে বোঝা
ধুর বুদ্ধু আবার একটু খামখেয়ালি এদিক ওদিক হলি
আগেই তুই ভালোই ছিলি আমার সাহাড়া।

মা ও আমার বর্ণমালা




মা ও আমার বর্ণমালা
 অসীম মালিক

আমার জন্মভূমির বুক থেকে উঠে আসা
                        নির্লিপ্ত অ আ ক খ ...
                            ম-ম-ম করতে করতে
                                     মা বলে ডেকে উঠলো ।

মায়ের শরীরে ,
বর্ণপরিচয় খুলে বসল ছেলে ।
আঁতুড় ঘর থেকে উঠে এলো
              নক্ষত্রপুঞ্জের মত বর্ণমালা ।

বর্ণগুলি , মায়ের অশেষ স্নেহে
           শব্দ তৈরী করতে করতে
                      ছড়িয়ে পড়ল রোদ্দুরে ...

স্বর্গ ,মর্ত্য ,পাতাল
         ত্রিভুবন ছুঁয়ে ফেলল -
                  ওষ্ঠে ছুঁয়ে বেড়িয়ে আসা ,
                                        মা শব্দটি 

হাসিতে আনন্দিত ,
       কান্নায় দুঃখিত হয়ে
                   পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভাষাকে
                               এক সারিতে দাঁড় করাল মা।  

বহ্নিশিখায় ,পুড়ল আমার মায়ের
              রক্ত মাংসের শরীর
                      দুর্বাঘাস হয়ে গজিয়ে উঠলো -
অমর একুশে ফেব্রুয়ারী ,
                 আমার উজ্জ্বল বর্ণমালা।

নশ্বর কথারা




নশ্বর কথারা
 তৈমুর খান


নশ্বর কথারা প্রতিদিন ঝরে পড়ছে

কথাদের আলোর বাজারে

দুর্মুখ বিহ্বল আমি
প্রত্যহ ধাঁধায় ফিরে আসি


যেসব ভালোবাসাগুলি প্রকাশ হয়
অথবা চুম্বনগুলি মেঘের মতো
বৃষ্টি ও রোদে মাখামাখি
তাদের দেখে নিই
আর স্নেহের প্রকাশে
অথবা মরমি কান্নায় সচকিত হই
কথাদের মনে হয় যুবক-যুবতী
যৌবন আকাঙ্ক্ষার নিগূঢ় প্রাচূর্যে

আভাসিত
অথবা ক্লান্তিহীন স্বর্গীয় বিভাস


চারিপাশ জুড়ে কথা
কথারা প্রজাপতি
কল্পনার ঘরদুয়ার জুড়ে তাদের খেলা
সামাজিক শাসনে প্রত্যয়দণ্ড
কখনো কখনো বিদ্রোহ

রোজ ভিজে যাই
উষ্ণ হই
নীরবতায় জাগরণে কথারা যাওয়া আসা করে


রাত হয়ে যায়
বুঝি না কথাদের
কোনো এক গূঢ় ছলনায় তাদের বসতি ।

দেখা




দেখা

সজল কুমার টিকাদার


তোর সঙ্গে দেখা ,বহুদিন পর।
জিজ্ঞাসা করি, 'কেমন আছিস,
তুই তোর মনের ভিতর? '

ভূত দেখার মত তাকিয়ে থাকিস ;
যেন দিন মাস বছর...।
এর মধ্যে নেমে আসে থরে থরে
ফুল,রঙিন বৃষ্টি,আর
অবশেষে পাথর।

মোমবাতির আলোর মত স্বচ্ছ
              শুধু একটু খানি হাসি
ছড়িয়ে কী বলতে চাইলি?
' এখনও ভালোবাসি ? '

ক্রিয়াপদ



ক্রিয়াপদ
 গৌরাঙ্গ মণ্ডল


সমগ্র, তোমাকে জানি। ৯০ ভাগ রিক্ততা নিয়ে
হন্ হন্ শব্দে হাঁটো মুদির দোকান ছেড়ে শব্দহীন চর..

একটার পর আরেকটা অঙ্কের খাতা শেষ করেও
আজ অবধি জল স্থল সমান করতে পারো নি। আর,
পারবেও না কোনোদিন।

একটা অব্যয়ে কখনও সমস্ত জুড়ে দেওয়া সম্ভব!!!
না। বরং স্পষ্ট আরো---- ক্ষয়িষ্ণু অব্যয় যেন
ঝুলন্ত হাইফেন কিংবা সাঁকোর মতোই
জলজ অলিন্দ চিরে হয়ে ওঠে দৃশ্যোজ্জ্বল।
নিজেই। অথচ--

আমরা বুঝতেও পারিনি-- কখন যে ক্রিয়াপদ গুলো
বাক্যে বিশেষ্য ছাড়িয়ে আরেক বিশেষ্য হয়ে গেছে..



পরিমাপ


আগুনে হাঁটছি। দুপাশে কাঁধেরা দগ্ধ,
চোখ বুজে দেখি-----রাষ্ট্রপুঞ্জ গলছে।

আগুনে বৃষ্টি , বৃষ্টি আগুনে বদ্ধ
চাবি গোছা যেন বিভ্রমে কিছু বলছে।

অগ্ন্যুৎপাত স্নিগ্ধ অঝোর দুপুরে
মাঝে মাঝে খসে সান্ত্বনা কিবা বৃষ্টি।

উচ্ছল স্রোতে পৃথিবী ভাসছে পুকুরে,
কিছু জল্পনা যেমন গিলেছে সৃষ্টি।

তুমি তো এঁকেছো আকাশ কুসুম ভাবনা,
উনপাঁজুরের অস্ত্রে ভীষণ রক্ত!

কেনো ডাক দাও অমাবস্যার জ্যোৎস্না?
আদো কি ছিলাম এতোটা শক্তপোক্ত !

ট্রামের গতিকে ভুলের আঙুলে গুনেছো,
বিনিময়ে আমি পূণ্য সকাল মাপিনি।

ভুলচুক ভুলে তুমিতো কবেই বেঁচেছো
মৃত্যুকে ছুঁয়ে, আমিতো এখনও মরিনি।