উত্তর মেলেনি
শুভজিৎ চক্রবত্তী
'আনন্দমঠ', বৃদ্ধাশ্রমে শীতের পড়ন্তবেলা বিমর্ষ বিকেল;
বিপত্নীক অশিতিপর বৃদ্ধ পরিত্রানবাবু ছলছল চোখদুটি, কাতর কন্ঠে তাঁর একটি মিনতি - কেন যে এমন হয়,
একসাথে মায়ের
মমতা আর পিতার আদর দিয়ে তিলে তিলে যারে গড়ে তোলা যায়, আপন পিতারে রেখে বৃদ্ধাবাসে
একমাত্র পুত্র তাঁর কেন তবে হয়েছে নির্দায়?
কি তার উত্তর
দেব আমি, রুদ্ধকন্ঠে কহিলাম - জানিনা, জানিনা,
ঠিক জানে অন্তর্যামী!
'গৌরকুঞ্জ' সনাতন
বোষ্টমের বহু পুরানো আখাড়া, সকাল সন্ধ্যায় সংকীর্তনে যার কৈবর্ত্যপ্রধান গ্রাম
নৃসিংহপুর ছিল
কৃষ্ঞ প্রেমে নিত্য মাতোয়ারা!
একদিন
সংকীর্তনহীন ভোরে শোনা গেল
'গৌরকুঞ্জবাসী কুসুম বোষ্টমী কন্ঠি বদলিয়ে
যার সহজিয়া পরিণয় বোধহয় তখনও ছিল বাকী;
সবার অজ্ঞাতে
কেমনে জানি সে হল সন্তানসম্ভবা, সনাতন বাবাজির শত অনুরোধে রহিল সে নিরুত্তর
বোবা!
সন্তানের পিতৃপরিচয় আজও যায় নাই জানা, কুসুম ঝরিয়া গেল তবু মুখ খুলিলনা!
সব অপমান,
লাঞ্ছনা লইয়া আপন শিরে, সন্তানের জন্মদিতে কোথায় হারিয়ে গেল আর আসিলনা ফিরে!
স্কুল কলেজের
সেরা ছাত্র পরাক্রম মাঝি, রসায়নে য্যুনিভার্সিটির সেই ছিল সব সেরা বাজি
চ্যান্সেলার,
রাষ্ট্রপতি সোনার মেডেল বড় সহজেই গেল তার জুটে, নাসার বৃত্তি নিয়ে দিল সে বিদেশ
পাড়ি
পিতামাতা আপন
সন্তান গর্বে সাফল্যের সবটুকু তার খেল চেটেপুটে! গবেষণা শেষে নাসার নিশ্চিত
চাকরী হাতে,
একবার দেশে ফিরে সংবাদের শিরোনাম, সভা, সম্বর্দ্ধনা, ফ্ল্যাস বাল্বের মুহুর্মুহু
সব ঝলকানি শুষে
নিয়ে দেশের
গৌরব হল গত; কি কারনে, কেন দিল সে জীবন বলি -
সিলিং ফ্যানই শুধু জানে! সেখানেই ফাঁসির দড়িতে ঝোলা প্রাণহীন দেহ, পরাক্রম
কেন আত্মহননের পথ বেছে নিল, আজিও জানেনা তাহা কেহ!
অনু আর চারু
মিলে জীবনের প্রথম বেলায় রূপের সাগরে দিয়ে
ডুব করেছিল একটি শপথ, একসাথে হেঁটে পার হবে জীবনের সুকঠিন পথ! ভালবেসে সব
বাধা পার হয়ে যাবে, এক হবে দুটি মন! জীবনে সে নাও ঘটে যদি মরনে মিলিবে দোঁহে
কাহীনিটা ইতিহাসে নিশ্চত ঠাঁই করে নেবে!! অনুপমা কি সহজে গেল ভুলে সব-
অ্যাংলোইন্ডিয়ান
যুবা পিটারের প্রেম সেই হল জীবনের নতুন বাস্তব! মিষ্টভাষী, সুদর্শণ, মেধাবী পিটার
প্রেসিডেন্সিতে
ছিল স্বভাবতঃ রমনীমোহন, ফিলদি রিচ এন আর পিতার সে যে বড় আদরের ধন!
গ্রাজুয়েশনের
শেষে ধনাঢ্য পিতা এসে, করে সাত তাডাতাডি, পুত্র আর পুত্রবধূ সাথে নিয়ে আবার
বিদেশ দিল
পাড়ি! চারুকেশ মজুমদার গণিতে রেকর্ড মার্কস নিয়ে স্নাতকোত্তর, তারপর হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলে এখন সে অঙ্কের টিচার;
জীবনের অঙ্কে তবে তার কেন এত ভুল, ঠিকঠাক মেলেনা উত্তর!
আমেরিকাবাসী
অনুপমা স্বামী, পুত্র, সংসারের ভরা গাঙে বেশ ভেসে আছে, চারুকেশ পানাশক্ত দলছুট
সংসারের মরা নদী পার হবে উপায় নেইকো তার কাছে!
এবার কাহীনি
শোনো এক সাবিত্রীর; না, না, সত্যবান স্বামী যার সে সাবিত্রী নয়! আছে তার অন্য
পরিচয় - অষ্টাদশী সাবিত্রীর হয়েছিল বিয়ে,
ধনী ব্যবসায়ী স্বামী, সুবৃহৎ ভিটে, ভদ্রাসন, প্রাইভেট কার, ব্যাঙ্কে অগাধ টাকা
যাতে সংসার করা যায় বেশ মন দিয়ে! বড় কেয়ারিং স্বামী, বউ-অন্তপ্রাণ দুই সন্তানের
পিতা সাবিত্রীকে সাথে করে ভারতভ্রমন শেষ, এইবেলা কাঠমান্ডু, পারো,
পাটায়ায় যেতে
তাঁর মন উচাটন! দশটি বছর কবে এরই মাঝে হয়ে গেছে পার, একবারও অসুখের কারন ঘটেনি;
সুন্দরী সাবিত্রী মনে হয় সুখী দাম্পত্যের সবচেয়ে বড দাবীদার!
বিধাতার মনে
ছিল কি যে কে জানিত? একদিন কাকভোরে প্রদোষ কালের অন্ধকারে, জানা গেল -
এক যুবকের
হাতধরে ভরা সংসার, স্বামী, সন্তান পিছে ফেলে, কোথা জানি গিয়াছে সে চলে!
সজ্জ্বন
প্রেমিক স্বামী তার পাগলের মত বুকে বয়ে প্রবল দাম্পত্য ক্ষত ঠিক খুজেঁ বের করে
তারে বুঝাইল কত! সাবিত্রীর এক কথা - মনে
তুমি পেয়না গো ব্যথা! এ আমার কৈশোরের প্রেম, পারিনা ছাড়িতে যদি চাও এ জীবন পারো
তুমি নিতে! সিক্ত, আরক্ত চোখদুটি তুলে সাবিত্রীর স্বামী, 'সুখী হও' এইটুকু বলে,
কেন এসেছিল চলে, সেও কি আরেক প্রেম, নাকি অভিনয় নয়নের জলে?
সত্তোর ছুঁই
ছুঁই বৃদ্ধ স্বাধীনতা আজও শিখে নাই
স্বাধীনতা প্রশ্ন করে - ঠিক ভুল
জেনে নিতে চায়
তবে কি এ
আজাদি ঝুঠা, আসলে আমরা পরাধীন, আদপে স্বাধীন নয়?
প্রতি বছরেই
মহা সমারোহে বাজে প্রজাতন্ত্র দিবসের ঢাক, রাজপথে কুচকাওয়াজ - সব সত্য
সযত্নে ঢাকা
থাক! জাতির নায়ক নিরুদ্দেশ, দাঙ্গা, মহামারী, দেশ ভাগ, শহীদের রক্তে লাল স্বদেশের
মাটি
কেউ সাজে দশ
লাখি স্যুটে জনগন বড়ই সজাগ? হে আমার দেশমাতা একবার বলো, উত্তর দাও তুমি মাতঃ
দেশপ্রেমিকের
ঢল আজ ঘরে ঘরে তোমার প্রেমিক সংখ্যা কত?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন